রহমত নিউজ 30 October, 2024 08:07 PM
আহমাদীয়া মুসলিম জামাত তথা কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের জাতীয় মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের ঐতিহাসিক কুচিয়ামোড়া কলেজ ময়দানে খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমীর মধুপুর পীর মাওলানা আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের মুসলিম ঘোষণা করতে হবে। ইসলামের আকীদা বিশ্বাসের অপরিহার্য অনেকগুলো বিষয় কাদিয়ানিরা অস্বীকার করে। বরং তারা তাদের মনগড়া মতবাদকে ইসলাম বলে চালিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই ওআইসি এবং রাবেতা আলমে ইসলামীসহ বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম সংস্থা ও একাধিক মুসলিম দেশে কাদিয়ানীরা রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম। গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় পরিচয় সুস্পষ্ট থাকা অপরিহার্য। তা না হলে সংখ্যালঘু কাদিয়ানিরা যেমন তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, উপরন্তু সংখ্যাগুরু মুসলিমরাও তাদের ধর্মের সুরক্ষা পাচ্ছে না। ফলে মাঝে মধ্যেই অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যা কখনই কাম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, একজন মুসলমান মুসলিম হওয়ার কারণেই খতমে নবুওয়াত আন্দোলন করতে বাধ্য। যতদিন মুসলমান থাকবে ততদিন খতমে নবুওয়ত আন্দোলন করতে হবে। কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি আদায়ে প্রতিটা পাড়া-মহল্লাকে একেকটি কাদিয়ানী বিরোধী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আজকের এই জাতীয় মহাসম্মেলন থেকে কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
জাতীয় মহাসম্মেলনে বক্তারা বলেন, আকীদায়ে খতমে নবুওয়াত মুমিন, মুসলমানদের ঈমানের অপরিহার্য অংশ। পূর্বাপর সকল মত পথ মাযহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ। সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতে সুষ্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।” এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া খতমে নবুওয়াতের পক্ষে কুরআন মাজীদে প্রায় শতাধিক আয়াত রয়েছে, রয়েছে দুই শতাধিক হাদীস।
বক্তারা আরও বলেন, আজকে বড় আফসোস আর পরিতাপের সাথে বলতে হয়, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আমাদের সমাজের অনেক মুসলমান মনে করে, ‘তারাও মনে হয় ইসলামেরই একটি দল। অথচ কাদিয়ানীদের সাথে মুসলমানদের বিরোধিতা কোন শাখাগত বিরোধিতা নয়। এটি সরাসরি ইসলাম এবং কুফুরের বিরোধ। সকল মত পথ মাযহাবের উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত, কাদিয়ানীরা কাফের, কাদিয়ানীদেরকে যারা কাফের মনে করবে না তারাও কাফের।
অনতিবিলম্বে কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, কাদিয়ানীরা এদেশে হিন্দু-খৃস্টান-বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মতো সংখ্যালঘু অমুসলিম পরিচয়ে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু মুসলিম পরিচয়ে বসবাস করে সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকাবাজী করা মেনে নেওয়া হবে না। তাদের ধর্মপরিচয় হবে, তারা কাদিয়ানী। মুসলিম নাম নিয়ে তাদের এদেশে থাকতে দেওয়া হবে না। তাদের উপাসনালয়গুলোকে মসজিদ পরিচয় দেয়া যাবে না। তাদেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। ইসলামের নামে রচিত তাদের সকল ধর্মগ্রন্থ অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তথাকথিত আহমাদিয়া সম্প্রদায় নামে তাদের সকল অপতৎপরতা অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমান হেফাজত করা আমাদের আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা।
সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, মুফতী জসিম উদ্দিন হাটহাজারী চট্টগ্রাম, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুল আউয়াল ঞ্জ, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, ফুরফুরা পীর মাওলানা আবু বকর মুহাম্মাদ আব্দুল হাই মেশকাত সিদ্দিকী , বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর শরাফাত আলী সপু, আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা রশিদ আহমদ মেরাজনগর, ঢালকানগর পীর মুফতী জাফর আহমদ, মুফতী নূর হোসেন নূরানী, মুফতী সাখাওয়াত হোসেন রাজী, মুফতী মোহাম্মদ ইমাদুদ্দীন, মাওলানা আব্দুল বসির সুনামগঞ্জ, মাওলানা মুফতী সাঈদ নুর, মুফতী মোহাম্মদ আলী, শায়খ হারুন ইজহার, মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী মৌলভীবাজার, মুফতী সৈয়দ সালেম কাসেমী সিলেট, মাওলানা নাজমুল হাসান উত্তরা, মুফতি মুহিউদ্দীন মাসুম,মুফতী বশির আহমদ, মাওলানা আবু আম্বার আব্দুল্লাহ, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, মাওলানা মহিউদ্দিন আল হোসাইনী, মুফতি আব্দুল মজিদ, মাওলানা উবায়দুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী, মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ, পাঙ্গাশিয়া পীর মাওলানা আব্দুল লতিফ ফারুকী, পয়সার পীর মাওলানা আহমাদুল্লাহ খান, চন্ডিবর্দী পীর মাওলানা আলী আহমদ চৌধুরী, মুফতী কামরুজ্জামান খাবাসপুর ফরিদপুর, মাওলানা আমজাদ হোসেন ফরিদপুর, মাওলানা আতাউল্লাহ বুখারী, মাওলানা এমদাদুল ইসলাম গেন্ডারিয়া, মুফতী ফয়জুল্লাহ আশরাফী,মুফতী আলী আকবর কাসেমী, মুফতী মাহবুবুর রহমান নবাবগঞ্জী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম কাসেমী, মুফতী নাজমুল হাসান বিন নূরী, মুফতী খালেদ সাইফুল নোমানী, মুফতী আব্দুল্লাহ সিরাজী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ আরমানী পাকিস্তান, মাওলানা ইউনুস কাসেমী, মুফতী আবুল হাসান পাথরঘাটা, মাওলানা হুসাইন আহমদ ইসহাকী, মাওলানা নেহাজ উদ্দিন গাজীপুর, মুফতী জয়নাল আবেদীন, মাওলানা শিব্বির আহমদ, মাওলানা মাহমুদুল আলম, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা আব্দুস সালাম দোহার, মুফতি আবু শাহাদাত খান, মুফতী মাহবুবুর রহমান জিয়া, হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ, মাওলানা আবু ইউসুফ, মুফতী আবদুল গাফফার, মাওলানা আবুল হাসানাত ফরিদী, মুফতী কামাল উদ্দিন কাসেমী দোহার, মুফতী মেরাজ হুসাইন, মাওলানা বিন ইয়ামিন সাদী, মুফতী ওবায়দুর রহমান হুজাইফী, মুফতী মুনিরুজ্জামান রাহমানী, মাওলানা মিজান আল মিহাদ দোহার ও মুফতী মারজানুল বারী সিরাজী প্রমুখ।
এসময় সম্মেলন থেতে ২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় :
১। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে স্বাক্ষাত ও স্মারকলিপি প্রদান
২। খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ এর জেলাভিত্তিক কমিটি গঠন এবং জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন আয়োজন। ৩.রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী এক বছরের মধ্যে ঢাকা রাজধানীতে মহাসমাবেশ।